ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫ , ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
পরনের কাপড় টিভি ফ্রিজ খাট টাকা সব পুড়ে শেষ বস্তিতে আগুন ঢাকা মেডিকেলের আউটডোরে চিকিৎসা বন্ধ পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধির রেকর্ড ঠাকুরগাঁও হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া শিশু গাজীপুরে উদ্ধার মাগুরার সেই শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হাসিনাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ডাক্তার দেখাতে না পেরে রোগীদের বিক্ষোভ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অভিমুখী চিকিৎসকদের পদযাত্রায় বাধা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলো পুলিশ যমুনায় যাওয়ার চেষ্টা শিক্ষকদের পুলিশের জলকামান-লাঠিচার্জ এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ ডাক্তার লিখতে পারবে না আজ সারাদেশে ২ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির ডাক ইসি কর্মীদের ওআইসিভুক্ত মিশন প্রধানদের কাছে ভোটের প্রস্তুতি তুলে ধরবেন সিইসি প্রক্সি ভোটে বড় সংশয় ‘বিশ্বাস’ পুলিশের জন্য বিপুলসংখ্যক গাড়ি কেনার উদ্যোগ ১৫ বছরের নিচে কেউ হজে যেতে পারবে না আবাসন ব্যবসায়ীদের দুর্দিন কাটছে না যুদ্ধবিরতিতে রাজি ইউক্রেন আলোচনায় বসবো না যা ইচ্ছা করুন মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানে কিল সুইচ
স্কুলে স্কুলে চলছে বার্ষিক খেলাধুলার কার্যক্রম আগামী মাসে সব বই পাওয়ার আশা

পুরাতনেই ঝুঁকছে শিক্ষার্থীরা

  • আপলোড সময় : ২৬-০১-২০২৫ ১১:১২:০১ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৬-০১-২০২৫ ১১:১২:০১ পূর্বাহ্ন
পুরাতনেই ঝুঁকছে শিক্ষার্থীরা
নতুন বছর শুরুর পর প্রায় এক মাস অতিবাহিত হতে চললেও রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা হাতে এখনো সব পাঠ্যবই পায়নি। একই অবস্থা দেশের প্রায় সব’কটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের। সামসুল হক খান স্কুল এণ্ড কলেজের প্রথম থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের তিনভাগের একভাগ বই তুলে দিয়েছেন শিক্ষকরা। তারা বলছেন, সরকারের শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে এখনো বেশিরভাগ পাঠ্যবই না আসায় শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। একইকথা বলছেন পাড়া ডগাইর আইডিয়াল স্কুল এণ্ড কলেজের অধ্যক্ষ আমিরুল ইসলাম। শুধু সামসুল হক খান স্কুল এণ্ড কলেজ কিংবা পাড়া ডগাইর আইডিয়াল স্কুল এণ্ড কলেজই নয়, রাজধানীসহ দেশের সব’কটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের হাতে এখনও নতুন বছরের বেশিরভাগ নতুন বই পৌঁছায়নি। এতে শিক্ষার্থীরা আপাতত পুরাতন বইয়েই ঝুঁকছেন। জানা গেছে, রাজধানীর পাশ্ববর্তী জেলা নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ-মানিকগঞ্জ ও টাঙ্গাইল এবং ময়মনসিংহে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী এখনো নতুন বছরের পাঠ্যবই হাতে পায়নি। এতে লেখাপড়া এগিয়ে নিতে বাধ্য হয়ে কম্পিউটারের দোকান থেকে প্রিন্ট আর ফটোকপি করছে অনেকে। তবে টাকার অভাবে সেটাও পারছে না অনেক মেধাবী গরীব শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষকরা বলছেন, যেসব নতুন বই পাওয়া গেছে সেগুলোতে ক্লাসে পাঠদানের পাশাপাশি পুরাতন বই দেখে পড়াশোনা চালানো হচ্ছে। এরমধ্যে বার্ষিক খেলাধুলার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই সব বই পাওয়া যাবে। শহরের দূর্গাবাড়ি এলাকায় কম্পিউটার প্রিন্ট আর ফটোকপির দোকানগুলোতে গিয়ে জানা যায়, অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবকসহ কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা এসে নতুন বইয়ের পিডিএফ প্রিন্ট করে নিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার টাকা বাঁচাতে প্রিন্ট করা পৃষ্ঠা ফটোকপিও করছেন। এরপর সেগুলো পড়ছে শিক্ষার্থীরা। রিয়াদ নামে কম্পিউটারের দোকানের এক কর্মচারী বলেন, বইয়ের এক পাতার দুই পৃষ্ঠায় প্রিন্ট বাবদ তিন টাকা নিচ্ছি। মূলত যারা না পাওয়া বইগুলো আগেই পড়তে চায়, তারাই প্রিন্ট করে নিয়ে যাচ্ছে। অনেকে ওই পাতাগুলো ফটোকপিও করছে। বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করানো হয়। পহেলা জানুয়ারি শুধুমাত্র দশম শ্রেণির বই পেয়ে বিতরণ করা হয়েছে। এরপর বিভিন্ন সময় কিছু বই এসেছে। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণির বই আসেনি। শিক্ষকরা পুরাতন বই দেখে পাঠদান করছেন। একই অবস্থা সিটি কলেজিয়েট স্কুলের। এই বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করানো হয়। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩১৪ জন। কোনো শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, আবার কোনো শ্রেণির জন্য শুধুমাত্র গণিত বই এসেছে। ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পুরাতন বই পড়াচ্ছেন। একই অবস্থা হলি ফ্যামিলি স্কুল, ময়মনসিংহ জুট মিলস্ আদর্শ বিদ্যাপীঠসহ অন্যান্য স্কুলগুলোতে। হলি ফ্যামিলি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে আন্দালিব। বই পেয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন বছরের তিনটা বই পেয়েছি। অন্যান্য বইগুলো না পাওয়ায় পড়তে পারছি না। এভাবে সময় যেতে থাকলে পড়ালেখায় পিছিয়ে যাবো। এজন্য পরিবারের সদস্যরা পুরোনো বই পরিচিতজনদের কাছে খোঁজাখুঁজি করছে। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না। একই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মোস্তকিম বিল্লাহ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রফিকুল হক জানায়, তারা কেউ একটি বইও পায়নি। আগের বছরের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কয়েকটি বই সংগ্রহ করে পড়ছে। কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী আদর্শ বিদ্যাপীঠের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিরাজুল ইসলাম ও এস এম আকাশ জানায়, তার বাবা পিডিএফ প্রিন্ট করে স্পাইরাল করে বাধিয়ে এনে দিয়েছে। এখন পড়তে অসুবিধা হচ্ছে না। নরসিংদীর মনোহরদী চরমান্দালীয়া উচ্চ বিদ্যায়লয়ের শিক্ষার্থী আলী হোসেন জানান, প্রতি বছরের শুরুতেই হাতে নতুন বই পেয়েছি। শুধুমাত্র এবারই পায়নি। বাধ্য হয়ে শহর থেকে পুরাতন বই কিনে আনতে হয়েছে। হলি ফ্যামিলি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মোস্তকিম বিল্লাহর মা শিলা রায় বলেন, আমার ছেলে পড়ালেখায় খুব আগ্রহী। সরকার বই দিতে দেরি করছে। ফলে বইয়ের অভাবে বাচ্চা পড়ালেখা করতে পারছে না। পুরাতন বই সংগ্রহ করে পড়ালেখা করাচ্ছি। হলি ফ্যামিলি স্কুলের সহকারী শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, যে বইগুলো পেয়েছি সেগুলোই শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে। তবে অনেক শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা পুরাতন বই সংগ্রহ করেছে। সেগুলোও শিক্ষার্থীরা পড়ছে। আমরা চাচ্ছি, সব নতুন বই দ্রুত চলে আসুক। কারণ নতুন বই হাতে পেলে ছোটো ছোটো ছেলে-মেয়েরা খুশি হয়, আনন্দ নিয়ে পড়ালেখা করে। বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লুৎফুন নাহার বলেন, যে বইগুলো এসেছে সেগুলো পড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি চলছে খেলাধুলা। তবে পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সনের পিডিএফের প্রিন্ট কপির প্রতি ঝুঁকছে বিভিন্ন কোচিংয়ের শিক্ষকরা। তারা প্রিন্ট কপি দেখেই পড়াচ্ছে। সিটি কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, অনেক ক্লাসে বাংলা, ইংরেজি কিংবা গণিত বইও পাইনি। এমতাবস্থায় শিক্ষকরা পাঠদান করতে পারছেন না। কিছু শিক্ষক পুরাতন বই পড়াচ্ছেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান খান বলেন, বই পরিমার্জন ও ছাপার কাজে কিছুটা দেরি হওয়ায় বই সংকট দেখা দিয়েছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকি বইগুলো চলে আসবে বলে জানতে পেরেছি। তখন সব শিক্ষার্থীকে বই দেয়া হবে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহছিনা খাতুন বলেন, পহেলা জানুয়ারিসহ এরপর থেকে যখনই বই আসছে বিতরণ করা হচ্ছে। আশা করছি সব বই কয়েকদিনের মধ্যে পাওয়া যাবে এবং সব শিক্ষার্থীরা নতুন বই পাবে। ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, চাহিদার তুলনায় বই কম এসেছে। অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ, বইয়ের অজুহাতে যেন পাঠ কার্যক্রম থেকে কেউ বিরত না থাকে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স